গাজী মনসুর
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ভিসানীতি নিয়ে আতঙ্ক দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখে। শনিবার রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসম্মেলনে মির্জা ফখরুল তাঁর এই সদ্য আবিস্কারের কথা জানান। ফখরুল মূলত প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন।
বলা বাহুল্য, মির্জা ফখরুল ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। তার পরেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর চোখে আতঙ্ক দেখলেন! তিনি বড়জোর টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন দেখে থাকতে পারেন। টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর চোখ দেখলেন এবং আতঙ্ক দেখলেন! রীতিমত দুঃসাধ্য! তবু তিনি দেখলেন। চোখ দেখে কিম্বা মুখ দেখে মনের অবস্থা বলতে পারা খুব সাধারণ মানুষের কাজ নয়। মনোবিজ্ঞানী হলে অবশ্য ভিন্ন কথা।
আলোচনা সহজ করার জন্যে আমরা দেখে নিতে পারি, তিনি আর কী বললেন প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন নিয়ে। “বিদেশিরা কেউ কেয়ারটেকার সরকারের কথা বলেনি” প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি নিয়ে তিনি বলেন,। “তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন এটা বিস্ময়ের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনলে মানুষ হাসে” এর পরের বাক্যে তিনি বললেন ঘোড়াও হাসে। ফখরুল সাহেবকে অসাধারণ না বলে পারা যাচ্ছে না।
একাধারে তিনি মানুষের চোখের ভাষা পড়তে পারেন। প্রাণির ভাষা বোঝেন, একই সঙ্গে প্রাণির হাসি কান্নার মত অর্ন্তগত অনুভূতিও টের পান। যাই হোক যেকোন সচেতন মানুষ টের পেয়েছেন, তিনি বিদ্রুপ করছেন। বিদ্রুপটা তিনি ভালই বোঝেন। তিনি কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোন যুক্তি দিতে পারেন না। আজ পর্যন্ত তিনি তথ্য উপাত্ত দিয়ে বলতে পারেননি, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন দরকার?
এখন আসি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি আসলে সেদিন কী বলেছিলেন, যাতে ফখরুল সাহেব তাঁর চোখে আতঙ্ক দেখলেন কিম্বা তাঁর হাসি পেলো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট বলে এসেছি, ভোটের জন্য রক্ত দিয়েছি। আমাদের ভোট শেখাতে হবে না। সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের নানা তথ্য জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পাশে জাতীয় সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফর উল্যাহ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। তবে তাদের কাউকে কোন কথা বলতে হয়নি। যা বলার শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিদেশি হস্তক্ষেপ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন, ডেঙ্গু মোকাবেলা, দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নানা বিষয় উঠে আসে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও আন্তর্জাতিক একটি মহলের ভূমিকা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসল কথা হলো নির্বাচনটাকে বানচাল করে দেওয়া’। তাদের কাছে কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থেকে মানি লন্ডারিং করে অনেক বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে। অবাধে এই টাকা এখন খরচ করে অপপ্রচার করছে। এর সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক মহল জড়িত।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, তারা যা খুশি করুক। কিন্তু মানুষের যদি কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে, আগের মতো অগ্নিসন্ত্রাস বা ওই ধরনের যদি কিছু করে তখন সরকার ছাড়বে না। তিনি আরও বলেন বিএনপি মিথ্যা এবং গুজব নির্ভর একটি দল। তাদের সব মিথ্যার জবাব আছে। কিন্তু দেয়ার এত সময় নেই।
প্রধানমন্ত্রৗ বলেন, বিএনপি ওই এক ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, টানা ক্ষমতায় আছি বলেই গোটা দেশটাই বদলে গেছে। ‘এখন নির্বাচন নিয়ে এত প্রশ্ন আসে কেন? এত উন্নয়ন হয়েছে, যার কারণে সবার মাথাব্যথা হয়ে গেল? ‘একসময় ছিল গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য জেনারেল। সেখান থেকেই তো আমরা গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল ফিরিয়ে এনেছি। একটা নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে আনায়, দেশটা এখন এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা হুমকির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মার্কিন উপদেষ্টার সামনে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়? তিনি জানান, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হয় না। শুধু আমাদের দূতাবাসে তারা কিছু নিরাপত্তা দেয়। সেখানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে নিরাপত্তার জন্য ১৫৮ জন পুলিশ নিয়োজিত আছে। আর রাষ্ট্রদূতের জন্য সিভিল ড্রেসে গানম্যান দেওয়া আছে। কাজেই তাঁর নিরাপত্তার তো ঘাটতি নেই।’
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভানের বৈঠক নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে সুলিভানের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। সভায় দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাড়ানোর জন্যে ঐকমত্য হয়। সুলিভান নারীশিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস দমনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের সরকারের অর্জনের প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি আবারও বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। তাঁকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আবারও সরকারের অঙ্গীকারের কথা নিশ্চিত করা হয়।
অথচ এই ফকরুল সাহেবরা বলেছেন, সেদিনের বৈঠক শেষ হয়নি। বৈঠকের মাঝে বিরক্ত হয়ে উঠে যান সুলিভান। বাংলাদেশের দু’একটি গণমাধ্যমে এনিয়ে মনগড়া খবরও ছাপা হয়। অথচ ওই বৈঠক বা তার আশে পাশে কোন সাংবাদিকের যাওয়ার অনুমতি ছিল না। এনিয়ে মার্কিন কোন সংস্থা কোন বিবৃতিও দেয়নি। কিন্ত খবর পড়ে মনে হচ্ছে হাসিনা- সুলিভান বৈঠকের সোফার নিচে বসে ছিলেন বাংলাদেশের অন্তত দু’জন সম্পাদক।
যাই হোক এখন ফখরুল সাহেবের কাছে প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের এমন সহজ বক্তৃতায় তিনি আতঙ্ক কোথায় পেলেন? বিরোধী পক্ষের মহাসচিব হিসাবে তার এটা পছন্দ না হতে পারে। তিনি এটার সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। সেটা তিনি সহজে বলতে পারেন। তার যুক্তি তুলে ধতে পারেন মানুষের সামনে। মানুষ নেবে কী নেবে না সেটা তাদের উপরই ছেড়ে দিন না। কিন্তু মনো বিশ্লেষণের নামে মিথ্যাচার কেন? হাসিনা- সুলিভান বৈঠকের সোফার নিচে সম্পাদক বসিয়ে কী কোন লাভ হবে? শেখ হাসিনা তো কোনভাবে ভয় পাচ্ছেন না।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।