খুলনা বিএল কলেজের ইতিহাস!

বাংলাদেশ শিক্ষা

কালপুরুষ: বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গ অর্থাৎ খুলনা বিভাগের খুলনা শহরের একটি নামকরা কলেজ ” সরকারি ব্রজলাল কলেজ”। এটি খুলনা শহরের দৌলতপুর ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। ব্রজলাল কলেজ নামটা শুনে চিনতে একটু কষ্ট হলেও কলেজটিকে বিএল কলেজ নামে একডাকে সবাই চেনে। এটি বি এল কলেজ নামেই প্রায় সকলের কাছে পরিচিত। এটি দৌলতপুর রেলস্টেশন থেকে দক্ষিণ দিকে ১৮ মিনিটের পায়ে হাটা দূরত্বে অবস্থিত।

বিএল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী ব্রজলাল চক্রবর্তী (শাস্ত্রী)। ১৯০২ সালের জুলাই মাসে খুলনার দৌলতপুরে মাত্র  ২ একর জমির উপর কলকাতা হিন্দু কলেজের অদলে “হিন্দু একাডেমী” নামে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রতিষ্ঠাকালের প্রথম দিকে এটি একটি আবাসিক প্রতিষ্ঠান ছিল যেখানে  চতুষ্পাঠী ও একাডেমি নামে দুটি শাখায় বিভক্ত ছিল। প্রতিষ্ঠানের চতুষ্পাঠী শিক্ষার্থীদের খাবার এবং আবাসন খরচ প্রতিষ্ঠানটি বহন করত। কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য জমিদার তৈলক্যনাথ চট্টোপাধ্যায় জমি ক্রয় করে দেন এবং পরবর্তীতে হাজী মোহাম্মদ মহসিন ট্রাস্ট তার সৈয়দপুর এস্টেটের ৪০ একর জমি এই প্রতিষ্ঠাতা দান করেন এবং মাসিক ৫০ টাকা অনুদান বরাদ্দ করেন।

কলেজ প্রতিষ্ঠার পর একটি বোর্ড অফ ট্রাস্টি গঠন করে তার মাধ্যমে কলেজটি পরিচালনা করা হতো। এই বোর্ড অফ ট্রাস্টি এর সভাপতি ছিলেন শাস্ত্রী ব্রজলাল চক্রবর্তী। ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠাতা শাস্ত্রী ব্রজলাল চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর তার নাম অনুসারে কলেজটির নামকরণ করা হয় “ব্রজলাল হিন্দু একাডেমী”। পরবর্তী সময়ে একাডেমীকে কলেজে উন্নতি করা হয় এবং এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয় বিএল কলেজ।

 কলেজটি ক্রমান্বয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় আর তারপর থেকে এখন পর্যন্ত কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রয়েছে। ১৯৬৭ সালের পহেলা জুলাই এটি সরকারি কলেজে পরিণত হয় এবং ১৯৯৩ সালে এটিকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

 ১৯০২ সালের ২৭ জুলাই এখানে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়। তখন পাকা ভীত ও পাকা মেঝে সহ বেড়া ও টিনের তরে দুটি ঘরে ক্লাস নেওয়া হতো। ১৯১০-১১ সালে কলেজে মুসলিম ছাত্রদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয় এবং মুসলমান ছাত্রদের আরবি এবং ফারসি পড়ানো হয়। মুসলিম ছাত্রদের আরবি ও ফারসি পড়ানো হতো মূল ভবনের আঙ্গিনার বাইরে অবস্থিত মুসলিম ছাত্রাবাসে। এর অনেক পরে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী এ কে ফজলুল হক কলেজের মুসলিম শিক্ষক নিয়োগের জন্য বলেন এবং প্রথম মুসলিম খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে জনাব মোসাদ্দার আলী যোগদান করেন। কলেজে প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৯ জন ছাত্র নিয়ে ফাস্ট আর্টস ক্লাস শুরু হয়। তখন শিক্ষকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ জন। বর্তমানে কলেজটি তে ২১ টি বিষয়ে অনার্স করানো হয়, যেগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, রাজনৈতিক বিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা, সামাজিক কাজ, অর্থনীতি, মার্কেটিং, ফাইনান্স, একাউন্টিং, ব্যবস্থাপনা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, বেটানি, প্রাণিবিদ্যা, ভূগোল ও পরিবেশ, সাইকোলজি, পরিসংখ্যান ও গণিত। এখানে ডিগ্রি কোর্স করানোর পাশাপাশি ২০টি বিষয়ে বর্তমানে স্নাতকোত্তর করানো হয় এবং ২০১০ সাল থেকে উচ্চমাধ্যমিক কোর্স নতুন করে চালু করা হয়।

কলেজের বর্তমান প্রিন্সিপাল শরীফ আতিকুরজামান স্যার। বর্তমান কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩ হাজার এবং শিক্ষকদের সংখ্যা ১৮৬ জন। কলেজের প্রধান প্রধান ভবন গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স – ১, দেশরত জননেত্রী শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স – ২, একাডেমিক কাম এক্সামিনেশন হল, চারটি সরকারি ভবন (মিলনায়তন, কমন রুম, ছাত্র সংসদ, ব্যাংক )। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের বসবাসের জন্য ছাত্রনিবাস রয়েছে ৫টি এবং ছাত্রী নিবাস ২টি। এছাড়াও কলেজটিতে ধর্মচর্চার জন্য রয়েছে একটি মন্দির ও একটি মসজিদ। এছাড়াও কলেজটিতে রয়েছে শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ভাস্কর্য, পুকুর রয়েছে ৩টি, খেলার মাঠ রয়েছে ২টি। কলেজটিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার যার বই সংখ্যা ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৩৫০ টি। কলেজটির শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক মন্ডলীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রয়েছে ৪টি বাস এবং ১টি মাইক্রোবাস।

কলেজের খ্যাতিনামা শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন এ. এফ. এম. আব্দুল জলিল, প্রবোধচন্দ্র সেন, চারুচন্দ্র বসু, নাজিরুল ইসলাম, ড. এ. এস. এম. আনোয়ারুল করিম, সতীশচন্দ্র মিত্র প্রমুখ। কলেজের প্রথম মহিলা শিক্ষিকা ছিলেন অধ্যাপক মুক্তি মজুমদার। তিনি ১৯৯৩ সালে দর্শন বিভাগে যোগদান করেন।

কৃতি ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন কবি গোলাম মোস্তফা, ড. দেবীপদ ভট্টাচার্য, হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ নওশের আলী, স. ম. বাবর আলী, রতন সেন, কুন্তল চক্রবর্তী, অদ্বৈতানন্দ মহারাজ, কাজী আব্দুল খালেক প্রমুখ। কলেজের প্রথম নারী শিক্ষার্থী কলেজ প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছর পর ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালের প্রথম দুজন নারী হোসনেয়ারা বেগম ও হাসমত আরা হেলেন এই কলেজে ভর্তি হয়। পড়াশোনা শেষ করে হোসনেয়ারা বেগম পেশায় একজন ডাক্তার হন এবং হাসমত আরা হেলেন পেশাই অভিনয়শিল্পী হয়েছিলেন।

 

বিএল কলেজের EIIN কোড:- ১১৬৯৫৪, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোড:- ০৩২২, যশোর বোর্ড কোড:- ৩৬৭৫,  উপবৃত্তি কোড:- ৪৪৭৪৫১২, email:- [email protected]

প্রতিষ্ঠানটির স্লোগান এসো জ্ঞানের সন্ধানে, ফিরে যাও দেশের সেবায়” প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও এই স্লোগান গেয়ে সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করে চলেছে সরকারি ব্রজলাল কলেজ উপনাম বি এল কলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *