যুবদল নেতার জবানবন্দি: ভার্চুয়ালি মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয় বিএনপি

দিনকাল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়ার আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনামের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি একটি মিটিং হয়। মিটিংটি শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ মিনিটের এই মিটিংয়ে ট্রেনে আগুন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত হওয়ার পর একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ট্রেনে আগুন দেওয়ার জন্য। এর পরে শুক্রবার রাত ৯টা ৫ মিনিটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। গ্রেপ্তারের পর ট্রেনে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানান মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ মনসুর আলম।

 

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, ‘আমরা ভার্চুয়ালি মিটিং করি। মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক, সদস্য সচিবসহ আমাদের যতগুলো টিম আছে তাদের টিম লিডারসহ ভার্চুয়ালি মিটিং করি। সর্বশেষ আমাদের মিটিং হয়েছে গতকাল (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে। আমি মতিঝিলে আমার বড় ভাইয়ের অফিসে ছিলাম, ৬ টার পর যখন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কল আসছে আমি যুক্ত হই মিটিংয়ে। প্রায় ১৭ মিনিটের মতো কথা হয়েছে গ্রুপে। মিটিংয়ে দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, একটি থানা ভিত্তিক আরেকটি ট্রেনের একটা ব্যাপার নিয়ে কথা হয়েছিল।’

 

এসময় কোরআন শরীফে হাত দিয়ে তিনি তার বাচ্চার কসম কেটে বলেন, ‘আমি সব সত্যি বলছি। আমি কাউকে ফাসাইতে চাই না কিংবা মিথ্যা কথা বলছি না। থানা আর ওয়ার্ডভিত্তিক টিমগুলোকে ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া ককটেল ফাটিয়ে আতংক সৃষ্টি করার জন্য বলা হয়েছে যাতে ভোটার না আসে। ট্রেনের বিষয়ে একটা কাজ ছিল, সেটা কে করতে পারবে বলে জিজ্ঞেস করেছিল আমাদের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম। তখন নির্দেশনা ছিল কথা অল্পের মধ্যে শেষ করে দেওয়ার জন্য। সদস্য সচিব জানতে চাইল ট্রেনে কে কাজ করতে পারবে? কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামি ট্রেনকে নরসিংদী কিংবা গাজীপুরের কোথাও ঢাকায় ঢোকার আগে আর নাহলে নারায়ণগঞ্জের রুটে আপ অ্যান্ড ডাউন যেকোনো জায়গায়। মিটিংয়ে অনেকেই ইচ্ছা প্রকাশ করলে সদস্য সচিব নির্দিষ্ট করে দেন কে কাজটি করবে। তিনি বলেন, তার সঙ্গে সোর্স দিয়ে দিবে। তখন তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলবো। এর মধ্যে সবাই গ্রুপ কল থেকে বেরিয়ে গেছে, তারা নিজেরা পার্সোনালি কথা বলছে।’

 

রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

 

ট্রেনের আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহত এবং ৮ জন দ্বগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থাও ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। শনিবার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনে দগ্ধ ৮ জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। একজনের শরীরের ৯ শতাংশ পুড়ে গেছে। সবাই মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *