ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে নির্মিত ঠাকুরগাঁও টংকনাথের বাড়িটি সংস্কারের অভাবে এখন ধ্বংসের দারপ্রান্তে। ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় পয়ত্রিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই কুলিক নদীর তীরে অবস্থিত রাজা টংনাথের এই জমিদার বাড়িটি চোখে পড়বে। তবে অপরুপ সৌন্দর্যের এই বাড়িটি এখন ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে রূপ নিয়েছে।
জমিদার বাড়িটি বর্তমানে অনেক অংশই নষ্ট হয়েছে দেখভাল ও সংস্কারের অভাবে। মাঝে মাঝেই খসে পড়ছে ইট ও পলেস্তেরা। দ্বিতল ভবনের অধিকাংশ প্রান্ত থেকে আগাছা জন্ম নিয়ে রুপ নিয়েছে গাছে।
চোখ জুড়ানো জমিদার বাড়ির পশ্চিমদিকে সিংহদরজা। দরজার চূড়ায় দিক নির্দেশক হিসেবে লৌহদন্ডে চিহ্ন অঙ্কিত থাকলেও তা এখন আর চোখে পড়ে না। দিন যত যাচ্ছে অযত্নে ও সংরক্ষণের অভাবে রাজবাড়ির ঐহিত্য মুছে যাচ্ছে।
জেলার ঐতিহ্য বহন করা শতবর্ষী ঠাকুরগাঁওয়ের জমিদার বাড়িটি যুগের পর যুগ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় এখন মাদকের অভয় আরণ্যে পরিণত হয়েছে। আর প্রশাসন বরাবরের মতো বলছেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র পাঠানোর পর আশ্বস্ত করেছেন দ্রুত সংস্কারের।
ঠাকুরগাঁও টংকনাথের রাজবাড়ি ইতিহাস
১৯১৫ সালে রাজবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। টংকনাথের পিতার নাম বুদ্ধিনাথ চৌধুরী। বুদ্ধিনাথ চৌধুরী ছিলেন মৈথিলি ব্রাক্ষণ এবং কাতিহারের ঘোষ বাগোয়ালা বংশীয় জমিদারের শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত। নিঃসন্তান বৃদ্ধগোয়ালা জমিদার কাশিবাসে যাওয়ার সময় সমস্ত জমিদারি সেবায়েতের তত্বাবধানে রেখে যান এবং তাম্রপাতে দলিল করে যান। তিনি কাশি থেকে ফিরে না এলে শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত এই জমিদারির মালিক হবেন। পরে বৃদ্ধ জমিদার ফিরে না আসার কারণে বুদ্ধিনাথ চৌধুরী জমিদারী পেয়ে যান। তবে অনেকে মনে করেন এই ঘটনা বুদ্ধিনাথ চৌধুরীর দু-এক পুরুষ পূর্বেরও হতে পারে বলে অনেক প্রবীণেরা ধারণা করেন।
রাজবাড়ি নির্মাণের কাজ বুদ্ধিনাথ চৌধুরী শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি। এটির কাজ সমাপ্ত করেন রাজা টংকনাথ। বৃটিশ সরকারের কাছে টংকনাথ রাজা উপাধী পান। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রাজ বাড়িটি নির্মিত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় রাজবাড়িটি। যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের পাতা থেকে। অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে রাজবাড়িটি সংস্কারের অভাবে এখন ধ্বংস্তুপ প্রায়।
ঠাকুরগাঁও টংকনাথের রাজবাড়ির পর্যটন সম্ভাবনা
দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা উত্তরের এ জেলার রাজবাড়িটি উপভোগ করতে এসে মুগ্ধতার বদলে ফিরছেন আক্ষেপে। স্থানীয়রা মনে করেন এখনও রাজবাড়িটি সংস্কার করা হলে বিনোদন স্পটের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে প্রসার ঘটবে। সাথে সাথে পর্যটন খাতও বৃদ্ধি পাবে।
রাজবাড়িতে ঘুরতে আসা ওমর ফারুক বলেন, এখানে ঘুরতে এসে দেখলাম এটির অবস্থা ভঙ্গুর। এটি মাদকের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। প্রাচীন এই স্থাপনাগুলো এভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু দেখার কেউ নেই। এগুলো সংস্কারের জন্য আবেদন জনাচ্ছি।
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, ইচ্ছে থাকলেও পত্নতত্ব অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া রাজবাড়ির কোন কাজ করা সম্ভব নয়। তবে সংস্কারের জন্য চিঠি পাঠানোর পরে পত্নতত্ব কর্তৃপক্ষ দ্রুত সংস্কার করার আশ্বস্ত করেছেন।