সেই আমেরিকার কাছেই অভিযোগের ঝাঁপি খুলল বিএনপি

দিনকাল বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে ৭ অক্টোবর ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের ৭ সদস্য। সরকারি দল, বিরোধী একাধিক দলের সঙ্গে সভা শেষে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সভা করেছে। এরমধ্যে বিএনপি ও এবি পার্টির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

 

বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যখন তাদের কাছে নালিশ জানাচ্ছে বিরোধীদলগুলো তখন মার্কিন মদদে গাজায় ইজরাইলি হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে হাজারও মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র যখন সরকারি বিরোধীদল নির্বিশেষে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তথন তাদের প্রতিনিধি দলের সামনে বিএনপির তুলে ধরা খণ্ডিত চিত্র নিয়ে সমালোচনা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

সেপ্টেম্বরে জানানো হয়, মার্কিন ভিসানীতির কারণে বাংলাদেশের কিছু বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের রাজনীতিক ভিসা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র জানায় বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অযাচিত হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের কারণে তাদের উপর এই ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হতে পারে। এর আগে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের মতো তৃতীয়বিশ্বের দিশগুলোকে পশ্চিমারা শেখানোর চেষ্টা করে। যেখানে তাদের ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট আছে সেসব জায়গার গণতন্ত্র মানবাধিকার যদি ধুলিসাৎ হয়ে যায় তাতেও পশ্চিমাদের কিছু যায় আসবে না। তারা যেখানে কর্তৃত্ব চায় সেখানে কাজটি যদি সহজ না হয় তাহলে তারা নানাবিধ হয়রানি তৈরি করে।

 

সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক দল যখন প্রাক নির্বাচনী পরিস্থিতি দেখতে এসেছেন তখন জাতিগতভাবে এক থাকা জরুরি বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলো অভিযোগ জানাতে আগ্রহী বেশি ছিলো। আলেচনা শেষে বিএনপি জানায়, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলে আসছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত দুই-তিনটি নির্বাচনে তারা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকে যাদের বয়স ৩০-৩২ বছর হয়েছে তারা বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। প্রশাসন ওবিচারবিভাগ দলীয় করণ করা হয়েছে দাবি করে তারা বলে, এখন নিপীড়ন-নির্যাতনসহ ভোট চুরির প্রকল্প অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে। একেবারে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, লুটেরা ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ তারা একটা প্রজেক্টের মাধ্যমে আবারও তারা বাংলাদেশের মানুষের ভোট চুরি করার অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন হতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার মতমতের ভিত্তিতে আরেকটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি‘এবিপার্টি’। সোমবার (৯অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে এই সাক্ষাতটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে এবি পার্টির নেতারা প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন প্রতিনিধি দলকে বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের অধীনে অনুষ্ঠিত ৭টি নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য। বাকী ৪টি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছিল তুলনামূলকভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য।

 

যুক্তরাষ্ট্রেরপ্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সাথে খোলামেলা আলোচনা শেষে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতাগোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে। বিএনপি নির্বাচন করবে না, তারা আন্দোলন করবে- সেখানে সহিংসতা হতে পারে। নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, এসব বিষয় নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।

 

মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে ইসিরও বৈঠক হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। তাদের সঙ্গে ইসির বৈঠকের মূল আলোচনার বিষয় ছিল অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সিইসি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল কী করবে আমরা জানি না। ইসির সঙ্গে বৈঠকে আইআরআই ও এনডিআইয়ের যৌথ এই দলটির মূল ফোকাস ছিল অবাধ, সুষ্ঠ, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। ওরা ইসির ভূমিকা, সরকারের ভূমিকা, দায়িত্ব এবং কার্যক্রমসহ অনেক কিছু জানতে চেয়েছে। আমরা সবকিছু তাদের সামনে তুলে ধরেছি। তারা যা যা জানতে চেয়েছিল, আমরা জানিয়েছি। এখন তারা কী করবে, তা আমরা জানি না। হয়তো তারা দেশে ফিরে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে; নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কী পাঠাবে না। অথবা পাঠালে কীভাবে পাঠাবে।’

 

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি এর চেয়ে অনেক খারাপ পরিস্থিতি অনেক দেশে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ সেসব দেশে হস্তক্ষেপ করছে না। তারা হিসেবে ভাবমূর্তির অভিভাবক হতে চায়। এর পিছে জিও পলিটিকাল স্ট্র স্ট্র্যাটেজিক্যাল কারণ আছে। বাংলাদেশ যে ভারত চীনের সাথে একই রকম সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে এটা আমেরিকার পছন্দ না।’ নির্বাচনের এত আগে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের কাছে দেশ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দেওয়ার অর্থ নেই উল্লেখ করে শামসুদ্দিনচোধূরী মানিক বলেন, ‘যারা নালিশ দিচ্ছে তারা দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করছে, আর যারা নালিশ শুনছে তাদের এইএখতিয়ার নেই। এটা বুঝে নেওয়া ভালো। এটা নির্বাচনের পর্যবেক্ষক দল। নালিশ তাদের কাছে না করে দেশের অথরিটির কাছে করুন।’

 

উল্লেখ্য, এই সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যারা সারাবিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বললেও তাদের মদদে লঙ্ঘিত হয় অনেক জায়গায়। শনিবার থেকে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার অন্তত ৭০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে বলে জানায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। গাজা উপত্যাকার ওপর সোমবার নেতানিয়াহু সরকারের সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের পর হামলা আরও বেড়েছে। এতে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েছে অবরুদ্ধ গাজা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *