ইউনূসের বিচার নিয়ম মেনেই হচ্ছে, বিদেশে থেকে চিঠি চালাচালির সুযোগ নেই

দিনকাল বাংলাদেশ

বিশ্বজিৎ দত্ত

 

আমাদের সরকারকে কোনো বিদেশি শক্তি বসায়নি ‘শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশে’ ওবায়দুল কাদের; নয়াপল্টনে বিএনপির কালো পতাকা মিছিলে নেতারা বলেন, সরকার জনগণের নয়, ভারত চীন রাশিয়ার; ইউনূসের কারণে বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে না: হাছান মাহমুদ; এই ৩টি শিরোনাম পড়ে আমার প্রথমেই যে কথাটি মনে পড়লো তা হলো, আমাদের দেশ কি অনেক বেশি বিদেশ নির্ভর? বা আমাদের দেশের রাজনীতি, আইন, বিচার, অর্থনীতি সব কি বিদেশি দ্বারা পরিচালিত হয়? হয় না। তবে কেন যেকোনো ইস্যুতেই বিদেশি শক্তিকে আমরা টেনে আনছি।

৭ জানুয়ারি ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জিতেছে। নির্বাচন পূর্ব থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যা কিছু করেছে তা সবই কি নিয়মের মধ্যে পড়ে? কেন করার সুযোগ পেয়েছে? কারণ বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রকে পৃষ্ঠপোষকতা জুগিয়েছে।

একই বিষয় লক্ষ্য করা যায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের ক্ষেত্রেও। ড. ইউনূস ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীকে ১২ মার্কিন সিনেটরের চিঠি দিয়েছে। ড. ইউনূস নোবেলজয়ী, একজন তারকাও বটে কিন্তু তিনি যদি অপরাধ করেন তবে কি বিচার হবে না? নাকি তার সব অপরাধ ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে? নিয়ম কী বলে?

নিয়ম হলো, আইন তার গতিতে চলবে, সেইখানে যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। সেই যুক্তি-প্রমাণে যদি দোষী নির্দোষ প্রমাণিত হয় তবে তিনি জামিন পাবেন। কিন্তু সেই বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন যদি একের পর এক চাপ বিদেশ থেকে আসতে থাকে তা নিশ্চয়ই কোনো দেশই গ্রহণ করবে না।

বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন এইরকম চাপ আমরা দেখেছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালীন। গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লারা হচ্ছে স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী। তারা যে অপরাধ করেছে তা গোটা দেশ জানে। তাদের বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেই বিচার প্রক্রিয়া যখন চলছিল তখন তুরস্ক দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিচার চিঠি দেন, যাতে তাদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়।

একই দৃশ্য দেখছি আমরা এই জায়গায়ও। ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা নিশ্চয় সরকার করেনি। সরকার মামলা করলে সেই বিষয়ে ভাবনার সুযোগ আছে। কিন্তু শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর করেছে মামলা। সেই মামলায় রায় চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেছেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সেই আপিলে জামিন পেয়েছেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলার রায়ে ছয় মাসের সাজার বিরুদ্ধে ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে খালাস চেয়ে আপিল করেন তিনি। কিন্তু যে অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত, তা আসলে জানা জরুরি।

২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করা হয়। ২০২৩ সালের ৬ জুন মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০২৩ সালের ২২ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশ কাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি।

গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।

এইধরনের গুরুতর অভিযোগে বিরুদ্ধে কীভাবে ড. ইউনূসের বিচার হওয়ার আগে থেকে বিদেশি শক্তি চাপ দেওয়া শুরু করে তা আসলে বুঝি না। আগে আমরা ভাবতাম বাঙালিই শুধু অপরাধী বা বাঙালিই আপস করে। সেই ধারণা ভেঙে গিয়েছে ইউনূসের বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন বিদেশি শক্তির চাপ বা ১২ মার্কিন সিনেটরের চিঠি দেখে।

এখন বিষয়টা পরিষ্কার, বিদেশিরাও আসলে আপসকামী। তারা মুখে ন্যায়ের কথা বললেও ন্যায় আসলে চাই না। চাই নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে। সেই স্বার্থ রক্ষার কবজ হিসেবে ড. ইউনূস ভালো দান।

 

বিশ্বজিৎ দত্ত, গণমাধ্যকর্মী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *