বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইট ইভ্যালি। ই-কমার্স সম্পর্কে আমাদের মধ্যে ধারনা একটু কম।আমাদের মধ্যেঅনেকেই মনে করেন লোকাল মার্কেটের ১৫০ টাকার জিনিস আমি অনলাইনে ২০০ টাকায় বিক্রি করলাম সেটাই মনে হয় ই-কমার্স। যেটা আসলে ই-কমার্স না। এই সমস্যার জন্যই আমাদের বাংলাদেশে অনেক ই-কমার্স সাইট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দারাজও সেভাবে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি একই কারনে।
গত কিছুদিন আগেও ১৫ টাকার মাক্স ১২০০ টাকায় বিক্রি করার জন্য দারাজকে জরিমানা করা হয়েছিল।
ই-কমার্স সাইটের যত সুবিধা–
• সারা দেশব্যাপী সার্ভিস।
• এখানে কোনো দোকান ভাড়া লাগে না
• অল্প সময়ে অনেক বেশি বিক্রি করা যায়
• বছরের ৩৬৫ দিনই খোলা থাকে
ইভ্যালি যেভাবে ব্যবসা করে–
ইভ্যালির ব্যবসার মূল অস্ত্র হলো সাপ্লাই চেইন কমিয়ে তারা নিজেরাই কাজ করে।ব্যাপারটা একটু সহজ করে বললে, যেমন ধরুন আপনার একটি পণ্য উৎপাদন করলেন যার খরচ পরল ২০ টাকা। এখন আপনি আরও ৫ টাকা খরচ করে এই পণ্যের প্রচার করলেন। আপনার মোট খরচ হলো ২৫ টাকা।
এখন আপনার প্রচার দেখে একব্যক্তি কিনতে আসলো আপনি তার কাছে সেটি বিক্রি করলেন ৩০ টাকায়। কারণ আপনি লাভ না রেখে বিক্রি করবেন না।এখন আপনার কাছে থেকে যে পণ্যটি ৩০ টাকায় কিনলো সে দেখলো যে এই পণ্যের ভালোই চাহিদা আছে। তখন সেই ব্যক্তি আপনার থেকে বেশি করে কিনে সেটি শহরে এটি সাপ্লাই দেয়া শুরু করলো।
দেখা গেলো এখানে তার ট্রান্সপোর্টেসন বাবদ খরচ গেলো ৫ টাকা এবং সেখান থেকে লাভ রাখলো আরো ৫ টাকা ।তার মানে সে শহরে প্রোডাক্টটি বিক্রি করলো ৪০ টাকায়। একজন সাধারণ ক্রেতা যদি শহরের কোনো দোকান থেকে কিনতে যায় তাহলে তাকে কিনতে হবে ৬০ টাকা দিয়ে।কারণ দোকানদারও তো কিছু টাকা লাভ করবে।
এইটাকেই বলে সাপ্লাই চেইন। এত এত হাত ঘুরে পণ্যটি
একজন সাধারণ ক্রেতার হাতে যখন যায় তখন তার দাম হয়ে যায় ৫ গুণ। ইভ্যালি ঠিল এই সুযোগটাকেই কাজে লাগায়। সরাসরি যে উৎপাদন করে তার কাছ থেকে এনে তাদের নিজেদের ওয়ারহাউজে রাখে এবং অর্ডার অনুযায়ী ডেলিভারি দেয়। তখন হয়তো ইভ্যালি সেটি ৩০ টাকায় বিক্রি করে থাকে।অন্যদিকে ক্রেতা ৬০ টাকার জিনিস ৩০ টাকায় কিনে খুশি হয়ে যায়। এতে ক্রেতারও লাভ, ইভ্যালিরও লাভ।
ইভ্যালি যেভাবে ৯০% ছাড় দেয়–
বলতে গেলে এক কথায় ইভ্যালি টাকা দিয়ে আপনার বিশ্বাস কিনে নেয়।হয়তো বুঝেলন না আসুন একটু বুঝিয়ে বলি। কিছুদিন আগে ফুডপান্ডার পাশাপাশি আরেকটি প্রতিযোগি প্রতিষ্ঠান মার্কেটে আসলো যার নাম Hungry naki। তখন ফুডপান্ডা হঠাৎ করেই ৫০-৬০% ডিসকাউন্ট এবং সাথে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি দেয়া শুরু করলো।এর ফলাফল পেলো খুব অল্পসময়ে। অফার দিয়ে আপনাকে পুরোপুরি ফুডপান্ডায় নিয়ে আসলো।
কারণ এত এত ডিসকাউন্ট দেখলে যে কেউ ফুডপান্ডায়ই অর্ডার করবে। এখন দেখা যায় আপনি ফুড পান্ডায় অফার না থাকলেও সেখানে অর্ডার করেন এবং এখানেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। তখন ফুডপান্ডা প্রথমে নিজেদের পকেট থেকে কিছু ইনভেস্ট করেছিলো আর এখন তার তিন গুন কামিয়ে নিচ্ছে। একই সাথে প্রতিদ্বন্দী প্রতিষ্ঠানকেও অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ইভ্যালিও ঠিক একই কাজটি করে থাকে।
প্রাথমিক অবস্থায় অনেক কম দামে কিছু পণ্য দিয়ে আপনাকে ইভ্যালিতে অভ্যস্ত করে ফেলবে এবং পরবর্তীতে সেই অফার আর দিবে না। কিন্তু ইভ্যালি বিশ্বস্ত হয়ে গেলে আপনি তখন বেশি টাকা দিয়েই ইভ্যালি থেকেই পণ্য কিনবেন।
৪ লাখ টাকার মোটরবাইক কিভাবে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে?
এর সহজ উত্তর সাপ্লাই চেনের কারণে। একটা বাইক সাধারনত শো-রুমে মাসের পর মাস পড়ে থাকে, এরপর হয়ত দেখা যায় একজন এসে কিনে নেয়। বিক্রেতা আগে থেকেই ধরে নেয় যে বাইকটা তার শো-রুমে ২ মাস থাকবে। তাই এই ২ মাসের খরচ বাইকের দামের সাথে যোগ করে, আবার বাইকের ডিস্ট্রিবিউটরের মুনাফা বাইকের দামের সাথে যোগ হবে।ট্রান্সপোর্টেশনের খরচও যোগ এটার সাথে হয়। মার্কেটিং করার খরচও এখানে কিছু যোগ হয়। বিক্রেতাদের শো-রুম চালাতে অনেক খরচ হয় এবং সে তার মুনাফার পরিমানও অনেক বাড়িয়ে নেয়।
এই ৪ লাখ টাকার বাইক আসলে দেশে এসেছিল ২ লাখ টাকায়। বিভিন্ন জনের হাত ঘুরার কারনে সেটা হয়ে যায় ৫ লাখ টাকা ।যেহেতু ইভ্যালি এখানে সাপ্লাই চেনের শাখা প্রশাখা কমিয়ে এনে সরাসরি আমদানি কারক থেকে পণ্য নিয়ে বিক্রি করতে থাকে। তাই তারা বিশাল মূল্য ছাড় দিতে পরছে।
তাহলে নির্দিষ্ট সংখ্যক পন্যেই কেন ছাড় দেয়?
এর কারন আমদানিকারক চায়না যে সাধারন বিক্রেতারা বিপদে পড়ুক বা তাদের শো-রুম বন্ধ হয়ে যাক। তাই তারা তাদের মধ্যে পরিচালিত সাপ্লাই চেন কমায় না। আর ইভ্যালিও তাদের হিসাব নিকাশ করে একটা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ ব্যবহার কারীর উপর বিনিয়োগ করে থাকে। এভাবেই ইভ্যালি মুলত ছাড় দিয়ে থাকে। তবে সারাজীবন এমন ছাড় হয়তো থাকবে না। অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারনত ২ বছর এমন মার্কেটিং এবং ক্রেতাদের উপর বিনিয়োগ করে থাকে।
ইভ্যালি কি আসলে ফ্রড?
ইভ্যালি বাংলাদেশের একটি ইকমার্স সাইট যেখানে প্রতিমাসে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি বার ভিজিট করা হয় এবং ২০২০ সালে এসে এর সচল সদস্য সংখ্যা দাড়ায় প্রায় ৫০ লক্ষ্যেরও বেশি। ইভ্যালিতে যারা কাজ করে থাকে বা ইনভেস্ট করে রেখেছে তাদের অনেকের মনে একটা প্রশ্নই ঘুরে ইভ্যালি কি আসলে ফ্রড? এই প্রশ্নের উত্তর এখন বলাটা সম্ভব না।
তবে তারা বাংলাদেশের বাজার ধরে এখানে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে ভবিষ্যৎ আমাজনের মত হওয়ার চেষ্টায় রয়েছে।যারা কিনা সারা বিশ্বে অর্ডার সরবরাহ করবে এবং আমাজনের মতোই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বিজনেস করতে চাচ্ছে। তাই ফ্রড হওয়ার সম্ভবনা খুব কম।