freelancer

ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে চাইলে যেসব বিষয়ে ভাবতে হবে

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা
বিশ্বজুড়ে এখন আয়ের অন্যতম মাধ্যম ফ্রিল্যান্সিং। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেকেই এখন চাকরি না করে ফ্রিল্যান্সিং করার কথা ভাবছেন। কারণ ফ্রিল্যান্সিং পেশায় একদিকে যেমন স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকে তেমনি আয়ের পরিমাণও বেশ ভালো।

 

ফ্রিল্যান্সিং পেশায় কাজের স্থান ও সময়ের কোনো বাঁধাধরা নিয়মকানুন থাকে না বলে অনেকেই এ পেশায় আসতে আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু এ পেশায় আসার আগে এই ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জগুলোও জেনে রাখা প্রয়োজন। এই পেশায় এলে একাকিত্ব, রাত জাগা একেবারে নিত্যসঙ্গী হয়ে যায়। যার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

 

ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, ক্লায়েন্টের বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হয় বলে অনেক সময় ফ্রিল্যান্সারকে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়। এ ছাড়া দেখা যায় ফ্রিল্যান্সিং কাজ সব সময় হাতে নাও থাকতে পারে। কাজ পাওয়ার জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। এর ফলে যারা চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চান, তাদের জন্য এখানে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

 

ফ্রিল্যান্সিং পেশা আপনাকে অন্যের থেকে একাকী করে দেবে। আপনার জীবনযাপন অন্যদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা হয়ে যাবে। আপনার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে। ফ্রিল্যান্সারদের একটানা রাতের বেলা জেগে কাজ করতে হবে। আপনার কোনো সহকর্মী না থাকায় নির্দিষ্ট সময় অফিসে যাওয়া লাগবে না। এখানে কাজের সময় তাই অফিসের পরিবেশ পাবেন না। তাত্ত্বিকভাবে এটা ভালো শোনালেও প্রকৃতপক্ষে আপনি অন্যদের থেকে একাকী হয়ে যাবেন।

 

আপনার একাকিত্ব দূর করতে একটা সাপোর্ট নেটওয়ার্ক থাকা দরকার। তাতে দিনের বেলা বা অন্য সময় গল্প-গুজব বা আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে পারেন। সেটা না হলে পুরোপুরি অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। এজন্য আপনাকে সকলের সাথে সম্পর্ক রক্ষার বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

 

আপনি যখন কোনো কোম্পানিতে কাজ করেন, তখন কোম্পানি অনেক জটিল অর্থনৈতিক বিষয় ঠিক করে রাখে। বিশেষ করে বলতে গেলে বেতন ও ট্যাক্সের মতো বিষয়টি। যখন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো স্বাধীন পেশার সঙ্গে যুক্ত হবেন, তখন নিজের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।

 

সঠিক সময়ে আপনার ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার পাশাপাশি অর্থ জমানোর মতো বিষয়গুলোতে দৃষ্টি দেয়া অবশ্যই দরকার। সরকারি চাকরি শেষে যেমন পেনশনের সুবিধা থাকে, তেমনি বছর শেষে নিজের কাছে যাতে অর্থ গচ্ছিত থাকে, সে বিষয়টিতে ফ্রিল্যান্সারকে ভালোভাবে নজর দিতে হবে।

 

যেকোনো যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। অসুস্থ হলে পড়লে চাকরিতে ছুটি পাওয়া যায়। আপনার ফ্রিল্যান্সিং কাজের মাঝে অসুস্থতাজনিত বিরতি বা বছর শেষে ঘুরে বেড়ানোর মতো সময় রাখবেন। একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করলেই তবে অর্থ পাবেন। আর যদি কাজ না করেন, তবে সে সময়টাতে আপনার অর্থ আসবে না। তাই ফ্রিল্যান্সিং বা স্ব–উদ্যোগে কাজ করার পূর্ব থেকে অর্থ জমানোর অভ্যাস করা খুবই জরুরি।

 

অনেক সময় কাজ শুরু করার সময় আপনার হাতে অর্থ নাও থাকতে পারে। কোন মাসে কত টাকা আয় করবেন, তারও কোনো বাঁধাধরা নিয়ম থাকে না এই পেশায়। কোনো কোনো মাসে অনেক আয় আসতে পারে, আবার কোনো কোনো মাস একেবারে আয় একেবারে শূন্য হতে পারে। তাই আয় ও ব্যয়ের মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখা খুবই উচিত। এ ছাড়া নিজের জন্য ছুটি রাখার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করতে হবে।

 

আপনারা যারা নতুন ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং করা বেশ কঠিন। বর্তমানে কাজ পাওয়া এখন অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে যারা ইতিমধ্যে এ পেশায় প্রতিষ্ঠিত ও যাদের অনেক কাজদাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক আছে, তাদের সুবিধাও আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

ফ্রিল্যান্সিং দক্ষ ব্যক্তিদের জন্য প্রতিযোগিতার জায়গা। এ ক্ষেত্রে স্বল্প দক্ষতা নিয়ে টিকে থাকা খুবই কঠিন। সীমিত দক্ষতা নিয়ে আপনি কাজের ক্ষেত্র নষ্ট করলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তাই ভালোভাবে কাজ না জেনে এ ক্ষেত্রে আসা উচিত হবে না।

 

বাড়িতে বসে কাজ করার বিষয়টি আপনার কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে। তবে এ পেশায় কাজ শুরুর আগে এ ক্যারিয়ারে আসার বিষয়টি নিয়ে অধিক চিন্তা করা প্রয়োজন। ফাইবার, আপওয়ার্কের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর কারণে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। এদের মধ্যে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি, যেমন ডিজাইন, মিউজিক ও অডিওর পাশাপাশি প্রোগ্রামিং ও টেক খাতে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ব্যাপক কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এ খাতে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার আগে আপনি কোন খাতে খুব ভালো করতে পারবেন, সেটি ভালোভাবে ভাবুন।

 

অনেক সময় ফ্রিল্যান্সিং পেশায় কাজ করতে এসে ফ্রিল্যান্সাররা হতাশ হয়ে পড়েন। এমন সময়ে আপনার নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। ফ্রিল্যান্সার পেশা মানে নিজের ব্যবসা, নিজেই এটার ব্যবস্থাপক, নিজেই এটার হিসাবরক্ষক। নিজের সঙ্গে নিজেকেই মিটিং করতে হবে। সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার তাড়া থাকতে হবে। ক্রেতার প্রত্যাশা সঠিকভাবে পূরণের তাড়া থাকতে হবে। সব সময় নিজেকে কাজের চাপ, যোগাযোগের মতো বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

অনেক সময় দেখা যায় হাতে কাজ না থাকতে পারে, তখন হতাশ হয়ে পড়লে চলবে না। সবসময় মনে রাখতে হবে, প্রতিটি কাজেই উত্থান-পতন থাকে। সবসময় নিজেকে নিজেই মোটিভেট করতে হবে। আপনার নিজের কাজের প্রতি সদিচ্ছা ও আত্মনিয়োগ আপনাকে সামনে এগিয়ে রাখবে। আপনার নিজের কাজে শৃঙ্খলা থাকলে, স্বাধীন ও নমনীয় সময়ে কাজ করার অন্যের কাছ থেকে সুবিধাও নিতে পারবেন। তাই খুব ভালোভাবে ভেবেচিন্তে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *