মাইলেজ নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ রেলওয়ে!

দিনকাল বাংলাদেশ ভ্রমণ

১৫৯ বছরের মাইলেজ নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ১৮৬২ সাল থেকে চলে আসা বাংলাদেশ রেলওয়ের বেতন-ভাতা প্রদান ছিল স্বতন্ত্র। করোনাকালীন জটিলতার মুখে রেলকর্মীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শুরুতে আইবাস প্লাস প্লাস সফটওয়্যারে রেলের পরিবহন বিভাগের বিশেষ ভাতা সংযুক্তি নিয়ে বিপাকে পড়ে রেলওয়ে। পরবর্তী সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রানিং স্টাফদের মাইলেজ নামক সুবিধা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। এতে কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন রেলওয়ে কর্মীরা। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করে দেয়ায় বৃহত্তর আন্দোলনে নেমেছেন রেলকর্মীরা। সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া না হলে রেলওয়ের স্বল্প জনবলে কার্যক্রম চালানো বড় ধরনের সংকটে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

রেলের পরিবহন বিভাগের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে লোকো মাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব-লোকোমাস্টার বা শান্টিং লোকোমাস্টার (এসএলএম), ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্ট, গার্ড, টিকিট ট্রেকার (টিটি)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রজ্ঞাপনে ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্টদেরও মাইলেজ সুবিধায় আনা হয়েছে। ব্রিটিশ আমল থেকে রানিং স্টাফদের মধ্যে লোকোমাস্টারদের নির্ধারিত বেতন-ভাতার বাইরে প্রতি ১০০ মাইল ট্রেনযাত্রায় একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেয়া হতো। তবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর লোকোমাস্টারদের বাইরে অন্য রানিং স্টাফরা আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে মাইলেজ সুবিধা পেয়ে আসছে। অ্যাটেনডেন্ট, গার্ডদের একদিনের মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ অর্থ দেয়া হতো।

৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রেলওয়ে রানিং স্টাফদের মাইলেজ অ্যালাউন্স প্রাপ্যতার অনুমোদনসংক্রান্ত একটি চিঠি দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়কে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দেয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শামীম বানু শান্তি স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, রেলওয়ে এস্টাবলিশমেন্ট কোডে উল্লেখিত অন্যান্য রানিং স্টাফদের ন্যায় ‘ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্ট’ পদে কর্মরত কর্মচারীদের আদেশ জারির তারিখ হতে ১০০ মাইল বা তার অধিক সময় চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনে ওইদিনের জন্য প্রযোজ্য দৈনিক বেতনের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ রানিং অ্যালাউন্স হিসেবে প্রদানে অর্থ বিভাগের সম্মতি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি অন্য রানিং স্টাফদেরও মাইলেজ হিসাবে মূল বেতনের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ সুবিধা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। তাছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রেলওয়ে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক হিসাবের ক্ষেত্রে মূল বেতনের সঙ্গে কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টি ওই চিঠিতে অসম্মতি জানানো হয়।

 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে রেলের রানিং স্টাফদের দেয়া মাইলেজ সুবিধাকে বিশেষ সুবিধা বিবেচনায় মূল বেতন-ভাতা প্রদানের পরবর্তী মাসে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সময় রানিং স্টাফরা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আবেদন জানানো হলে তত্কালীন সরকার মাইলেজ সুবিধাকে রানিং স্টাফদের ‘পার্ট অব পে’ ঘোষণা দেয়। ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই থেকে মূল বেতনের ভিত্তিতে রানিং অ্যালাউন্স প্রদানের প্রস্তাব হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২২ জানুয়ারি তত্কালীন অর্থমন্ত্রী এ প্রস্তাবে সই করেন। পরবর্তী সময়ে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানিং স্টাফদের বিশেষ এ ভাতা প্রদানের প্রস্তাব ১৯৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারি অনুমোদন করেন।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, একজন রানিং স্টাফের তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা এবং নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম রয়েছে। তবে রেলের স্বার্থে এ নিয়মের কোনো রানিং স্টাফকে কাজে যুক্ত করা হলে বোনাস মাইলেজ সুবিধা দেয়ারও নিয়ম আছে। রেলওয়েতে তীব্র লোকবল সংকট থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রানিং স্টাফদের বিশ্রামকালীনও কাজ করতে হচ্ছে। এভাবে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে অতিরিক্ত কাজ কাজ করার মাধ্যমে রানিং স্টাফরা প্রতি মাসেই বিপুল পরিমাণ মাইলেজ সুবিধা জমা করে তাদের অ্যাকাউন্টে। রেলওয়ে আইনে এ সুবিধাকে ‘পার্ট অব পে’ হিসেবে নির্দিষ্ট করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে মাইলেজকে নির্দিষ্ট করে দেয়া আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে রেলকর্মীরা।

 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ব্রিটিশরাই রেলওয়ের রানিং কর্মচারীদের জন্য বিশেষায়িত এ সুবিধা দিয়ে এসেছে। ১৯৯৭ সালে সরকার এটিকে নির্দিষ্ট করে ‘পার্ট অব পে’ ঘোষণা করেছে। চাহিদার অর্ধেকেরও কম জনবল দিয়ে ট্রেন পরিচালনার কারণে রানিং স্টাফরা ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই অতিরিক্ত কাজ করছেন। নতুন নিয়মে কর্মচারীরা ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন পরিচালনার কাজ করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়। সৃষ্ট জটিলতার সমাধান না হলে রেলওয়েতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান তিনি।

সূত্র : বণিক বার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *