ড. মোবারক হোসেন
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ২২৩টি আসনে জয় লাভ করে, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসন, জাতীয় পার্টি ১১টি আসন এবং অন্যান্যরা ০৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। উক্ত নির্বাচনে ১৯ জন নারী সাংসদ সদস্য বিজয় লাভ করেছেন।
০৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন প্রতিমন্ত্রীসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্তত ১৯ জন এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন ও সম্পাদকমণ্ডলীর দুজন সদস্যসহও উক্ত নির্বাচনে হেরেছেন। তার মানে আমাদের বুঝা উচিৎ নির্বাচন কতটা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে।
২০২৪ সালের ০৮ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,জার্মানি,অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও জাপান থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
তারা আরও বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দল দ্বারা ভোটারদের কোন ভয়ভীতি প্রদর্শন হয়নি।পর্যবেক্ষকগণরা আরও বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও প্রচারণায় না আসায় নির্বাচনের উৎসব মুখরিত পরিবেশে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আরও সুন্দর ও আনন্দময় হতো।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভের পর বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গণভবনে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়া, চীন, ভারত,সৌদি আরব,জাপান, কাতার, ইরাক, ইরান,পাকিস্তান,মিসর,দক্ষিণ কোরিয়া,ব্রুনাই,ফিলিস্তিন, ভুটান, সিঙ্গাপুর,শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া সহ এখন পর্যন্ত ২৬ দেশের রাষ্ট্রদূত সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ছিল একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের, সেটা কিন্তু তিনি করতে পেরেছেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে অংশগ্রহণমূলক ও ভোটারের উপস্থিতির। আমরা জানি বাংলাদেশের একটি বড় দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, তার দায়ভার শেখ হাসিনার উপর দিচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা সহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা।
আর আসলে বিএনপির প্রধান নেতা নিজেই দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন, তারা নির্বাচনে আসলে নিশ্চিত পরাজিত হবেন তাই তারা নির্বাচনমুখী হননি। আর বাংলাদেশের জনগণের তার অপকর্মের ব্যাপারে সম্পূর্ণ ধারণা আছে। দ্বিতীয়ত আমরা আসি ভোটের উপস্থিতি মাত্র ৪১.৮%, তাহলে নির্বাচন গ্রহণ যোগ্য হবে কিনা।আমরা যদি বিগত ৫ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচনের দিকে তাকাই তবে তার উত্তর আমরা পেয়ে যাবো। আমরা বিগত ৫ বছরের কিছু দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে দেখি যে,
তিউনিশিয়ার নির্বাচনে ভোট পড়েছে ১১.২২%, লেসোথো ৩৭.৪৪%, বার্বাডোস ৪১.৭৩%, এঙ্গোলা ৪৪%, রোমানিয়া ৩১.৮৪%, হংকং ৩০%, বুলগেরিয়া ৩৭.৯৮%, আয়ারল্যান্ড ৪৩.৮৭%, পর্তুগালে ৩৯.২৪% ভোট পড়েছে। আর যদি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকেও দেখি তবে আমরা দেখবো তাদের সর্বশেষ নির্বাচনের ভোট রেশিও ৪৯-৫৪%। আর বাংলাদেশে একটি বড় দল নির্বাচনে আসেনি , তা সত্ত্বেও এই ভোটের সংখ্যা খুবই সন্তোষজনক।
বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকা সর্বশেষ ত্রিশ বছর যাবত একক সুপার পাওয়া হিসেবে রাজত্ব করছে। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে এখন নতুন কিছু গ্রেট পাওয়ারের উদয়ন হয়েছে। তাই এখন বিশ্ব রাজনীতি নিউ নরমাল পলিসির দিকে যাচ্ছে। নিউ নরমাল হচ্ছে এমন বিষয় যে, একক কোন সুপার পাওয়ার বিশ্ব শাসন করতে পারবেনা, অন্যান্য অনেক গ্রেট পাওয়ার আছে তাদেরকেও লাগবে৷
একেকটা দেশ একেকটা বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ করবে।আর আমরা এখন বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি নিউ নরমালের দিকেই গিয়েছে। আমরা বিশ্ব রাজনীতিতে এখন দেখছি যে, আমেরিকা ছাড়াও চীন, রাশিয়া, ভারত ও জাপানের প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হওয়ায় তাদের পাশে দুটি গ্রেট পাওয়ার চীন ও ভারতের উপস্থিতি ও প্রভাব আছে।
আর আমরা যদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফরেন পলিসি লক্ষ করি তবে দেখতে পাবো, বাংলাদেশ শুধুমাত্র ভারতের সাথেই ডিফেন্স সম্পর্ক শেয়ার করে। আর চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক শেয়ার করে। আর এই দুই দেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন এবং থাকবেন। আঞ্চলিক অখণ্ড ও উন্নয়নের জন্য চীন ও ভারতের যেমন বাংলাদেশ কে প্রয়োজন আছে তেমনি বাংলাদেশের তাদের ব্হিরে যাওয়া উচিৎ হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জনাব পিটার হাস গতকাল নির্বাচনের ব্যাপারে বলেছিলেন নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু আমরা এখন লক্ষ্য করেছি যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সুষ্ঠু হয়নি বলে বলতে চাচ্ছেন। আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমে কথা ছিল বাংলাদেশ অবাধ, নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন করতে হবে। আমরা পিটার হাসের এবং বিদেশি পর্যবেক্ষকগণের কথায় নিশ্চিত হয়েছি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়েছে।
এখন সমস্যা হলো বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, আসলে বিএনপি কেন নির্বাচনে আসেনি সেই দায়ভার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা নেওয়া সম্ভব না। তবে বিএনপি ছাড়াও আরও অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে এই বিষয়ে সঠিক তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রেরণ করতে হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে সব সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
ড. মোবারক হোসেন
সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়