বিশেষ প্রতিনিধি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার। বিকেল ৩টায় শুরু হবে অধিবেশন। তার আগে কার্যোপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে প্রথম অধিবেশনের মেয়াদ ঠিক করা হবে। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী নতুন সংসদের প্রথম দিন রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন।
তবে এবার ভোটগ্রহণের পরদিন থেকেই নতুন সংসদের অধিবেশন আলোচনায় রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে স্বতন্ত্র ৬২ প্রার্থী, আগের সংসদের বিরোধী দল জাপার ১১ সদস্য ও আরও তিন দলের তিনজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এবার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের বাইরে ৭৫ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনে নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল এবারও স্পিকার হিসেবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ডেপুটি স্পিকার হিসেবে শামসুল হক টুকুকে মনোনয়ন দিয়েছে।
এদিকে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে বিরোধীদলের উপনেতা করা হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি সংসদ সচিবালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। ২৯ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের মধ্যে সমালোচনা ছিল গৃহপালিত বা এই ধরনের শব্দ। এই শব্দগুলো যাতে আর ব্যবহার না হয় সে লক্ষ্যে সংসদ ও সংসদের বাইরে আমরা আগামীতে ভূমিকা রাখবো। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে কাজ করবো। জাপা আসলেই বিরোধী দল সেটা প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে এবার।
দ্বাদশ সংসদের ২০ শতাংশই স্বতন্ত্র এমপি। সংসদে তাদের ভূমিকা কী হবে সেটা দেখতে সংসদ অধিবেশনে চোখ সবার। সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা করবেন নাকি দলের অনুগত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তা দেখতে আগ্রহী সাধারণ মানুষ।
যদিও এরমধ্যে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে হবে এবং সংবিধান আত্মস্থ করতে হবে। সংসদ কার্যপ্রণালী বিধি পড়তে হবে। আমাদের সংসদ ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপ পার্লামেন্ট। কাজেই সংসদ প্র্যাকটিস ভালো করে জানতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব প্রকল্প দেশের মানুষের জন্য অর্থবহ সেসব প্রকল্পই গ্রহণ করা হয়। স্বতন্ত্র এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় যদি কেউ ভূমিহীন, গৃহহীন থাকেন, তাদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
সংবিধান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচন যেমন প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে, তেমনি তার প্রতিফলন দেখা যাবে অধিবেশনে। নির্বাচিতরা প্রত্যেকেই এলাকায় নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সংসদকেই মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখবেন। স্বতন্ত্রদের ভূমিকার কারণেই অন্য সংসদের থেকে এবারের সংসদ ভিন্ন হিসেবে পরিচিতি পারে। বিশ্লেষকরা বলেন, গত দুটি সংসদের তুলনায় এবারের সংসদ আগের ভাবমূর্তি ফিরে পাবে বলে আশা করা যায়। স্বতন্ত্ররাই সংসদকে প্রাণবন্ত রাখবেন। তারা তাদের অবস্থান জানানোর মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আচরণই প্রাণবন্ত করবে অধিবেশন।
জাতীয় পার্টির আগের ধরণের সমালোচনা করে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘গত দুটি সংসদে সেই অর্থে জনগণের কোনো বিরোধী দল ছিল না। জাতীয় পার্টিকে কখনই বিরোধী দল হিসেবে দেখা যায়নি। কিন্তু এবার তারা বিরোধীদল হিসেবে আবারও এসেছে। স্বতন্ত্রদের কারণে জাতীয় পার্টিকেও সক্রিয় থাকতে হবে। এবার ব্যাপক আগ্রহ মানুষের মধ্যে কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শফিক আহমেদ বলেন, যেভাবে নির্বাচন হয়েছে তার একটা চিত্র সংসদেও দেখা যাবে বলে আমার মনে হয়। স্বতন্ত্ররা সংসদে সক্রিয় থাকলে অনেকদিন পরে অংশগ্রহণমূলক সংসদ মানুষ আগ্রহভরে দেখবে।’
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেন ১০ জানুয়ারি। শপথ নেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন বসার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।