অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতির নেতিবাচক ও ইতিবাচক দিক

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা
বিশ্বব্যাপী মহামারি কোভিড-১৯ এর জন্য ২০২০ সালের মার্চ মাসে শেষের দিক থেকে সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকার কারণে সারা বিশ্বের মতই বাংলাদেশেও অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা চালিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতির বিস্তারিত অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করেছি আমরা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতির সাথে তারা কতটুকু মানিয়ে নিতে পেরেছেন জানতে চেয়েছিলাম একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কাছে। তিনি জানান অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতি শুরুর দিকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনেক দুর্লভ এবং ব্যয়বহুল ছিল কারণ এই ধরনের খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন কেউই হয়নি আগে।
কিন্তু বছর যেতে না যেতেই এখন অনলাইন পদ্ধতির সুফল নেওয়া শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। যেকোনো জায়গা থেকে ক্লাস এ যুক্ত হওয়ার সুবিধা, ক্লাস লেকচারের রেকর্ডিং সংরক্ষণের মাধ্যমে পরবর্তীতে সময়ে সেই ক্লাসগুলো পুনরায় করার সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীদের বেশ উপকার হচ্ছে বটে।
অনলাইনে শিক্ষাপদ্ধতির ব্যাপারে আমরা কথা বলেছিলাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউ আই টি এস এর সহকারী অধ্যাপক কামরুন নাহার খান মুক্তির সাথে। তিনি জানান যে, মহামারি শুরু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ও গতিশীল রাখার লক্ষ্যে শিক্ষকদের বেশকিছু গবেষণা করতে হয় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি যুগোপযোগী প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করতে।
পুরো প্রক্রিয়াটা শিক্ষকদের জন্য খুব বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের কোর্স ক্যাটালগের পরিবর্তনসহ প্রায় সব ধরনের হার্ড কপি কে সফট কপি তে কনভার্ট করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য। তার কাছে আরও জানতে চেয়েছিলাম অনলাইন পদ্ধতি কি চলমান শিক্ষাপদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ পরিপূরক হিসাবে বিবেচনা করা যায় কিনা ? তিনি বলেন, অনলাইন পদ্ধতি কোনো ভাবেই গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতির পরিপূরক হতে পারে না।
মূলত অনলাইন পদ্ধতি হচ্ছে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে কোনো ভাবে ব্যাহত না হয় সেই লক্ষ্যে উদ্ভাবিত একটি প্রক্রিয়া বলা চলে। যেহেতু সারা বিশ্বজুড়ে আমরা এক মহামারির সাথে কঠোড় লড়াই করছি এই অবস্থায় অনলাইন পদ্ধতিই একমাত্র উপায় যাতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার মূল কার্যক্রম অব্যাহত রাখার।
অনলাইন পদ্ধতির শুরুতে শিক্ষকদের জন্য বেশ অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই করতে হয়েছে। কোন মাধ্যমটা ব্যবহার করে ক্লাস নিলে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকটা সুবিধা হবে সেই কথাটা মাথায় রেখে যে কোনো একটি স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম নির্ধারণ করা ছিল খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। এছাড়াও অফলাইন এবং অনলাইন পদ্ধতির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য থাকায় কারণে শিক্ষার্থীদের কোর্স এর ক্যাটালগ পরিবর্তন করা এবং অনলাইনের মাধ্যমে মেধা যাচাই করাটাও খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল বলে মনে করেন তিনি।
প্রায় এক বছরেরও বেশি হতে চলছে অনলাইনে শিক্ষাদানের অনেক অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, গত এক বছরে শিক্ষাদানের প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি পরিবর্তন হয়েছে। আমরা শিক্ষকগণ দেশের দূর্গম অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কথাটা মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের সব ক্লাসগুলো রেকর্ডিং সরবরাহ করছি যাতে করে কেউ শিক্ষা বঞ্চিত না হয়।
অনলাইন পদ্ধতিতে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সার্বিকভাবে উপকার হয়েছে। রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে বসে আর সময় অপচয় হচ্ছে না এখন আর এবং চাইলেই যে কোনো শিক্ষার্থী তার প্রয়োজন অনুযায়ী ক্লাস রেকর্ডিং গুলো দেখে পড়াশোনা করতে পারছেন যা আগে কোনো ভাবেই সম্ভব হত না। মহামারি অতীতকালেও হয়েছে তাই আমাদের সবরকম পরিস্থিতির জন্যই নিজেদের সর্বদা প্রস্তুত রাখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *