চুল পড়ে যাচ্ছে? চুলের যত্নে ঘরোয়া পদ্ধতি!

স্বাস্থ্য

সব বাঙ্গালি নারীরই এক রাশ ঘন কালো স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল চিরকালের পছন্দ।তবে বর্তমান নারীদের মধ্যে চুলের রঙের মাপকাঠিটা একটু পাল্টেছে। যেমন কালোর বদলে চলে এসেছে ধূসর, বাদামী প্রভৃতি রঙের ছোঁয়া। তবে চুলের রঙ যাই হোক না কেন, চুল হবে ঘন এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল। তাই চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি তুলে ধরা হল।

নীচের ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি পড়ুন এবং আপনার কাছে যেগুলি সুবিধাজনক মনে হচ্ছে সেই পদ্ধতিতে আপনার চুলের যত্ন নিন। দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরেই ফল পেতে শুরু করবেন, আর মাস দুয়েক পরে আপনার চুলে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

চুলের গোড়ায় অয়েল ম্যাসেজ(তেল মালিশ)

শীতকালে দৈনন্দিন চুলে তেল মালিশ করা- এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাদাম তেল(Almond oil),জলপাই তেল(Olive oil) মিশ্রণ করে মাথায় ভালো করে মালিশ করলে চুল পড়া (hair loss) কমে ও চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই তেল গুলি ভিটামিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ।

চুলে উষ্ণ তেল মালিশ

এক চামচ অলিভ অয়েল, এক চামচ বাদাম তেল, এক চামচ নারকেল তেল মিশ্রণ করে হালকা গরম করে নিতে হবে। মাথায় এবং চুলের গোড়ায় ভালো করে মালিশ করতে হবে। সারা রাত মাথায় রেখে সকালে শ্যাম্পু করতে হবে। সারারাত সম্ভব না হলেও কমপক্ষে এক ঘণ্টা রেখে মাথায় শ্যাম্পু করতে হবে।

শুধু নারকেল তেল অথবা শুধু আমলকী তেল গরম করে চুলের গোড়ায়, মাথার চামড়াতে ভালো করে মালিশ করতে হবে। কমপক্ষে এক ঘণ্টা অথবা সারারাত রেখে মাথা শ্যাম্পু করতে হবে।

এইভাবে চুলের যত্ন করলে চুলে পুষ্টি লাভ হয়, চুল পড়া (hair loss) বন্ধ হয়, চুলের ডগা ফাটা বন্ধ হয়, মাথার চামড়া শীতের শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা পায়।

টক দই এর মিশ্রণ দিয়ে চুলের যত্ন

তিনটে ডিমের সাদা আংশ, দু-চামচ টক দই নিয়ে ভালো করে মিশ্রণ তৈরি করে তাতে শিকাকাই গুঁড়ো মিশিয়ে মাথার মাথার চুলের গোড়ায় ভালো করে মাখতে হবে। আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।সপ্তাহে একদিন এই পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নিন।

এক কাপ হেনা পাউডার ও হাফ কাপ টক দই এর মিশ্রণ তৈরী করে, মিশ্রণটি ভালো করে মাথায় মেখে নিন। মিশ্রণটি যতক্ষণ না শুকনো হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মাথায় রেখে দিন। মাথাটা ভালো করে শুকনো হলে ঠাণ্ডা জলে হাল্কা শ্যাম্পু দিয়ে মাথাটা ধুয়ে নিন। এতে চুল পড়ার প্রবণতা কমবে।

টক দই এর সাথে কয়েক ফোঁটা লেবু দিয়ে হেয়ার মাস্ক তৈরী করুন। মাস্কটি ভালো করে মাথায় মেখে নিন। মিশণটি মাথায় শুকনো হওয়া পর্যন্ত রেখে দিন। মাথাটা ভালো করে শুকনো হলে ঠাণ্ডা জলে হাল্কা শ্যাম্পু দিয়ে মাথাটা ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি অকৃত্রিম কন্ডিশনার(natural conditioner)।এই মাস্কটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলে করলে মাথার ত্বকের (scalp)শুষ্কতা কমবে এবং এতে খুশকিও কমবে। খুশকি (dandruff) কমলে স্বাভাবিক ভাবে চুল পড়াও কমবে।

নিম পাতা বাটুন টক দই এর সাথে মেশান। মিশ্রণটি ভালো করে মাথায় মেখে শুকনো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। মাথা শুকনো হলে ঠাণ্ডা জলে ভালো করে ধুয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুল পড়া কমায়। চুল পেকে (grey hair) যাওয়া প্রতিরোধ করে। চুলের বৃদ্ধি (hair growth) হতে সাহায্য করে।

মধুর মিশ্রণ দিয়ে চুলের যত্ন

মধু,দারুচিনি গুঁড়ো এবং অলিভ অয়েলের মিশ্রণ

একটি বাটীতে দু টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও দু টেবিল চামচ মধু নিয়ে মধু ও অলিভ অয়েল ভালো করে মেশান।এই মিশণের সাথে এক চামচ দারুচিনি গুঁড়ো দিয়ে, যতক্ষণ না মিশ্রণটি মসৃণ হয় ততক্ষণ নাড়তে থাকুন। চুলের গোড়ায় মিশ্রণটি লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই পদ্ধিতিতে চুলের যত্ন নিন, চুল পড়া কমবে।

মধু এবং পিঁয়াজের মিশ্রণ

একটি পিঁয়াজ নিয়ে, পিঁয়াজটি বাটুন তাতে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি ভালো করে চুলের গোড়ায় মাখুন। ১৫ মিনিট রেখে উষ্ণ জলে মাথা ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া কমাতে সপ্তাহে দুবার এই পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নিন।

আমলকি দিয়ে চুলের যত্ন

আমলকী ভিটামিন ‘C’ তে পরিপূর্ণ একটি ফল। চুলের গোড়া শক্ত করতে, চুল পড়া কমাতে, অকালে চুল পাকা রোধ করতে সাহায্য করে। তাই চুলের যত্ন নিতে আমলকী ব্যবহার করুন।

 

আমলকী নারকেল তেলের মিশ্রণ

চার থেকে পাঁচটা আমলকী নিয়ে কেটে শুকনো করতে হবে। শুকনো আমলকীর টুকরো গুলো ১ কাপ নারকেল তেলে দিয়ে, তেলটা ভালো করে ফোটাতে হবে যতক্ষণ না তেলটা কালো হয়। তেলটা ঠাণ্ডা হলে আধঘণ্টা রেখে মাথা শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

আমলকী লেবুর রস

আমলকী থেঁতো রস বার করে করে দুই টেবিল চামচ রস অথবা আমলকী গুঁড়োর সাথে স্মান পরিমাণে লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণটি ভালোকরে মাথায় মেখে নিতে হবে। চুল্টা শুকনো হলে মাথাটা ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে নিতে হবে।

 

আমলকী শিকাকাই এর মিশ্রণ

দুটো আমলকী এবং চার থেকে পাঁচটা শিকাকাই নিয়ে দানা গুলো বাদ দিয়ে ভালো করে বেটে এর পেস্ট বানাতে হবে। পেস্টটি ভালো করে মাথায় মাখতে হবে। ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে সাধারণ জলে মাথাটা ধুয়ে ফেলতে হবে।

যেকোন আমলকী মিশ্রণ অন্তত সপ্তাহে দুদিন করতে হবে। দুমাস পরে এর ফলাফল ভালোভাবেই চোখে পরবে।

নিম পাতা দিয়ে চুলের যত্ন

দশ  বারোটা শুকনো নিম পাতা নিয়ে একটা পাত্রে জল নিয়ে ফোটাতে হবে। যতক্ষণ না জলটা ফুটে অদ্ধের্ক হচ্ছে ততক্ষণ ফুটিয়ে যেতে হবে। এরপর জলটা ঠাণ্ডা হলে ঐ নিম জল দিয়ে মাথাটা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। নিম পাতার জল চুলের খুশ্‌কি দূর করতে সাহায্য করে, চুলের বৃদ্ধি হতে, চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায়।

সূত্র : সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *