বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসার সময় অনেক প্রবাসী বা ভ্রমণকারী সঙ্গে করে স্বর্ণ বা বিভিন্ন নিয়ে পণ্যে আসেন, কিন্তু বাংলাদেশ কাস্টমস আইনে বিদেশ থেকে স্বর্ণ বা পণ্যে আনার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। পণ্য বা লাগেজ পরিবহনে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষেরও কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। বিশেষ করে স্বর্ণ আনার ক্ষেত্রে বেশকিছু নীতিমালা রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। এখানে বিভিন্ন পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যে কোনো শুল্ক বা কর দিতে হয় না। তবে বাড়তি পণ্য বা অলংকারের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যে শুল্ক এবং কর পরিশোধ করতে হয়।
বৈধভাবে যতটুকু স্বর্ণ একজন যাত্রী আনতে পারেন তার চেয়ে বেশি স্বর্ণ আনলে প্রাথমিকভাবে জরিমানা এবং স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে কারাদণ্ডও হতে পারে। এসব বিষয় না জানার কারণে অনেকে না বুঝেই বিমানবন্দরে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন।
আরও পড়ুনঃ
ধরুন আপনি বিদেশ থেকে দেশে ফিরছেন অথবা বা ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরছেন, সঙ্গে পরিবারের জন্য এনেছেন কিছু স্বর্ণালংকার। কিন্তু আপনি জানেন না কতটুকু স্বর্ণ বহন করা বৈধ। বিমানবন্দরে আপনি এই স্বর্ণালংকারের জন্যই পরতে পারেন বিরাট ঝামেলায়। কারণ কতটুকু স্বর্ণ বহন করা বৈধ, আর কতটুকু বহন করা অবৈধ, এই তথ্য আপনার জানা না থাকলে বিপদ শুধু নয়, কারাভোগের মতো বড় বিপদেও পড়তে পারেন আপনি।
এবিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬-তে এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যা ‘যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬‘ নামে পরিচিত। উল্লেখিত বিধিমালা আপনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েব সাইড www.nbr.bd থেকে দেখে নিতে পারেন অথবা সরাসরি নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করে জেনে নিতে পারেন।
যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬
-
স্বর্ণালংকার (Gold Jewellery) বা স্বর্ণের বার (Gold Bar) কতটুকু আনা যাবে এবং ট্যাক্স (Customs duty) কত?
এই বিধিমালার আওতায় বিমানবন্দরে শুল্ক ও কর ধার্য করা হয়। বিধামালার ৩ এর ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘একজন যাত্রী অনধিক ১০০ ( একশত ) গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার অথবা ২০০ ( দুইশত ) গ্রাম রৌপ্যের অলংকার (এক প্রকার অলংকার ১২টির অধিক হবে না) সব প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ব্যতিরেকে আমদানি করতে পারবে।’
অর্থাৎ একজন যাত্রী বিদেশ থেকে আসার সময় শুল্ক-কর ব্যতীত সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম স্বর্ণ সঙ্গে আনতে পারবেন। তবে এক প্রকারের অলংকার ১২টির বেশি হতে পারবে না।
স্বর্ণের বার (Gold Bar) এর ক্ষেত্রে বিধামালার ৩ এর ১০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘একজন যাত্রী বিদেশ হইতে দেশে আগমন কালে অনধিক ২৩৪ গ্রাম (২০ তোলা) ওজনের স্বর্ণের বার (Gold Bar) বা স্বর্ণপিণ্ড অথবা ২৩৪ গ্রাম (২০ তোলা) ওজনের রৌপ্যের বার বা রৌপ্যের পিণ্ড সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে আমদানি করিতে পারিবেন।’ তোলা প্রতি ২ হাজার টাকা শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে।
-
স্বর্ণ আনার পর কি এয়ারপোর্টে কোন নিয়ম অনুসরণ করতে হবে?
যদি আপনার কাছে ১০০ গ্রাম এর অধিক স্বর্ণালংকার (Gold Jewellery) বা স্বর্ণের বার (Gold Bar) র থাকে তাহলে ব্যাগেজ ঘোষণা ফর্মের ১০ এর ঙ তে হ্যা-তে টিক দিবেন এবং এই ফর্ম টি এয়ারপোর্টের কাস্টমসে জমা দিয়ে আপনার স্বর্ণবারের বিপরীতে ব্যাংকে কর পরিশোধ করে জমা রশীদ কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে দেখাবেন।
-
সর্বনিম্ন কত বয়সের যাত্রীরা বা একই পরিবারের কয়জন সদস্য একসাথে স্বর্ণ আনতে পারবেন?
১২ বছর বা তদূর্ধ্ব যাত্রীরা স্বর্ণ আনার সুবিধা পাবেন। তার নিচের বয়সের যাত্রীদের স্বর্ণ তার অভিভাবকের স্বর্ণের হিসাবে যুক্ত হবে। একই পরিবারের সকল সদস্যই প্রত্যেকের নির্দিষ্ট সীমার ভিতরে স্বর্ণ আনতে পারবেন। তবে সেই স্বর্ণ যার যার তার কাছে থাকতে হবে। কোন একক ব্যক্তির কাছে সকলের স্বর্ণ একসাথে থাকলে সেই স্বর্ণগুলো ওই একক ব্যক্তির স্বর্ণ হিসেবে গণ্য হবে।
-
শরীরে পরিহিত থাকা স্বর্ণ, অলঙ্কার হিসেবে নেয়া হবে কি?
শরীরে পরিহিত স্বর্ণালংকার ওই ব্যক্তির আনিত স্বর্ণালংকারের অন্তর্ভুক্ত হিসাবে গণ্য হবে।