প্রাথমিক সাফল্য আরো শক্তিশালী ইলেকট্রিক ব্যাটারি তৈরির লক্ষ্যে!

আন্তর্জাতিক শিক্ষা

জার্মানিসহ অনেক দেশে ইলেকট্রিক গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও প্রচলিত ব্যাটারির নানা দুর্বলতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে৷ ইউরোপের গবেষকরা আরো শক্তিশালী, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি তৈরির ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছেন৷

সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল মেটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ল্যাবে ভবিষ্যতের ইলেকট্রিক ব্যাটারি নিয়ে গবেষণা চলছে৷ সেই ব্যাটারি আরও শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে, আরও বেশিদিন টিকবে৷ একইসঙ্গে এখনকার ব্যাটারির তুলনায় আরো শক্তিশালী ও পরিবেশবান্ধবও হবে৷ ব্যাটারির ভিতরের রাসায়নিক অনুপাত এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ৷

যে কোনো ব্যাটারির মধ্যে ক্যাথোড ও অ্যানোড থাকে৷ অর্থাৎ প্লাস ও মাইনাস পোল৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপকরণ হলো অ্যালুমিনিয়াম ও তামা৷ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ক্যাথোডের উপর অক্সাইড এবং নিকেল, কোবল্ট ও ম্যাংগানিজের স্তর থাকে৷ অ্যানোডের দিকে থাকে গ্রাফাইট৷ মাঝে প্রাচীর হিসেবে থাকে সেপারেটর নামের অংশ, যার মধ্য দিয়ে আয়ন চলাচল করতে পারে৷

দুই অংশের মধ্যে সংযোগ চলবে না৷ কোষের একটি করে পরিবাহী ইলেকট্রোলাইটের মধ্যে  ক্যাথোড ও অ্যানোড থাকে৷ চার্জ করার সময় ক্যাথোডের স্তর থেকে লিথিয়াম-আয়ন বেরিয়ে এসে সেপারেটরের মধ্য দিয়ে অ্যানোডের দিকে ধেয়ে যায়৷ সেখানে গ্রাফাইটে গিয়ে সেগুলি জমা হয়৷ ব্যাটারি ব্যবহারের সময় লিথিয়াম-আয়ন আবার ক্যাথোডের দিকে ফিরে যায় এবং শক্তি সৃষ্টি করে৷ কনটাক্ট পয়েন্টের মাধ্যমে ইলেকট্রন চলাচল করে৷

 

কর্সিন বাটালিয়া ও তাঁর টিম ইলেকট্রিক ব্যাটারি আরও অপ্টিমাইজ বা দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে গবেষণা চালাচ্ছেন৷ ক্রিটিক্যাল কাঁচামাল হিসেবে কোবাল্টের পরিমাণ আরও কমানো অন্যতম প্রধান লক্ষ্য৷ উল্লেখ্য, গত ২০ বছরে কোবাল্টের অনুপাত অনেক কমানো সম্ভব হয়েছে৷ ব্যাটারির আয়ু ও শক্তির ক্ষেত্রে ক্রিটিক্যাল কোবাল্টের কোনো জুড়ি নেই৷ সে কারণে এই কাঁচামাল পুরোপুরি বাদ দিয়ে সমান গুণসম্পন্ন বিকল্প খোঁজা অত্যন্ত কঠিন কাজ৷

 

তবে কিছু সাফল্যের কারণে এই শিল্পখাতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷ ইলেকট্রিক গাড়ি শিল্পে  চীন ইতোমধ্যেই ৬,০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে৷ ইউরোপ এ ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে৷ কর্সিন বাটালিয়া বলেন, ‘‘ইউরোপীয়রা অনেক বছর ধরে ঘুমানোর পর অবশেষে এই প্রবণতা টের পেয়েছে৷ কিন্তু আমরা আসলে এখন ‘ফাস্ট ফলোয়ার’, অর্থাৎ এশিয়া মহাদেশ বহু বছর ধরে যে জ্ঞান আয়ত্ত করেছে, আমাদের সে সব বুঝতে হবে৷ সেইসঙ্গে গবেষণার নানা উদ্যোগ চালু হয়েছে৷ ফলে দশ বছর পর ব্যাটারির বাজারে আমাদেরও কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নেতৃস্থানীয় ভূমিকা দেখা যাবে৷’’ ইউরোপিয়ান ব্যাটারি অ্যালায়েন্স ব্যাটারি সংক্রান্ত ৭০টি গবেষণা প্রকল্পে সহায়তা করছে৷ ল্যাবের পরিবেশে ইতোমধ্যেই সাফল্য পাওয়া গেছে৷

 

লিথিয়াম পরিবাহী হিসেবে প্রচলিত তরল ইলেকট্রোলাইটের বদলে গবেষকরা হালকা সলিড অংশ ব্যবহার করছেন৷ ফলে ব্যাটারি অনেক হালকা ও আরো নিরাপদ হয়ে উঠছে৷ কারণ তরল পদার্থের কারণে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি এত বিপজ্জনক৷ কর্সিন বাটালিয়া বলেন, ‘‘একদিকে নিরাপত্তার বিষয়টি রয়েছে৷ অন্যদিকে আমরা আরো দ্রুত ব্যাটারি চার্জের আশা করছি৷ ব্যাটারি আরও গরম হলেও সেটা মেনে নিতে হবে৷’’

ভবিষ্যতে ইলেক্ট্রো-মোবিলিটির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবার লক্ষ্যে গবেষকরা কাজ করছেন৷ কয়েক বছরের মধ্যে শুধু ব্যাটারির আয়ু বাড়বে না, সেটি আরো শক্তিশালী, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে৷

সান্ড্রা ওডারমাট/এসবি

সূত্র : dw.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *