দেশে ডাকঘরের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৫০০টি এবং ডাক বিভাগে জনবল রয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি। আছে ১৪টি মেইল প্রসেসিং সেন্টারও, দেশজুড়ে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা, আর ৮ হাজারের মত পোস্ট ই-সেন্টার। এসব ডাকঘরের প্রতিটিতে ই-কমার্স বুথ স্থাপনের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এই উদ্যোগ সফল হলে ডাকঘর গুলোকে ই-কমার্সের ডেলিভারি সেন্টার পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে দেশের সব্ব প্রত্যন্ত এলাকায় ই-কমার্স সেবা পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এমনই একটি বিশেষ প্রস্তাবনা ডাকঘরকে দিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (E-CAB)। প্রস্তাবনার বড় অংশের সঙ্গে একমত পোষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশব্যাপী ই-কমার্সকে ছড়িয়ে দেওয়ার মহাপরিকল্পনা করেছেন।
এর আগেও ই-কমার্সের সম্প্রসারণে যৌথভাবে একসাথে কাজ করেছে ডাকঘর (ডাক অধিদফতর) এবং ই-ক্যাব। তবে ডাক বিভাগের ই-কমার্স শুরুর সময় থেকেই একটি ই-কমার্স সেল গঠন করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠান দুটির যৌথ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে , প্রায় ৭৫০টি পোস্ট ই-সেন্টারের ১৫০০ লোকবলকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা, ৬৪টি জেলা ডাকঘরের একটি ই-পোস্ট অ্যাপ সংবলিত স্মার্টফোন প্রদান, গত ৩ বছরে ৩ লাখের বেশি ই-কমার্স এর পণ্য ঢাকা জিপিও থেকে ইস্যু করা, ২১টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি সম্পাদন, ডাক অধিদফতরের EMTS সেবার সঙ্গে ই-পোস্ট সফটওয়্যারের কারিগরি ভাবে ইন্টিগ্রেশন সম্পাদন। ফলে ডাকঘরের সঙ্গে ই-কমার্স একদম অপরিচিত নয়। বরং দিন দিন ই-কমার্সে সফল প্রবেশ ঘটেই চলছে ডাকঘরের।
বর্তমানে ৬৪ জেলার প্রধান ডাকঘর থেকেই ই-কমার্স পণ্যগুলো ইস্যু করা যাচ্ছে। পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে সব প্রত্যন্ত এলাকায়।জানা গেছে, প্রায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ডাকঘর ই-কমার্স ডেলিভারি সেবাটি চালু করে। ২০১৬ সালে পাইলট আকারে ঢাকা শহরের প্রায় ২১টি ডাকঘরে ই-কমার্স ডেলিভারি সেবা চালু হয়। পরবর্তী সময়ে দেশের সব উপজেলা গুলোতে ডাকঘর পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে ই-কমার্স ডেলিভারি সেবা বাড়ানো হয়। ২০১৬ সালে প্রতিদিন ডাকঘর গড়ে ১০টি ডেলিভারি দিয়েছিল, ২০১৭ সালে সেটি দেয় ২০টি করে। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০টি। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা উন্নীত হয় প্রায় ১ হাজার ২০০টিতে। ২০২০ সালে যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৫০০টিতে। ২০২১ সালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০টি ই-কমার্স দিয়ে বছর শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল কমার্স মানে ই-কমার্সের সম্প্রসারণের জন্য আমরা প্রায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ই-ক্যাবের সঙ্গেও প্রতিনয়ত কাজ করছি। ই-ক্যাবের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া অনেক ভালো। আমি মনে করি যে, প্রত্যন্ত গ্রাম, গ্রামের মানুষকে ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছাতে গেলে আমাদের ডাকঘরের বিকল্প নেই। আমাদের সাড়ে প্রায় ৯ হাজারের বেশি ডাকঘর আছে। সমসংখ্যক উদ্যোক্তাও আছে সেখানে। ফলে ডাকঘরের মাধ্যমে প্রত্যন্ত সব এলাকায় ই-কমার্স নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’
জানা যায়, প্রতিটি ডাকঘরে ই-কমার্স বুথ সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে এই উদ্যোগেও, যেখানে অপারেটররা শুধুই ই-কমার্স ডেলিভারি পণ্য ইস্যু ও রিসিভ সংক্রান্ত কাজ করবেন। ফলে কমে যাবে ডেলিভারির অতিরিক্ত সময়। এ কারণে পোস্টাল ডেলিভারিতে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা আরও আগ্রহী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডাকঘরের ই-কমার্সগুলো নিয়ে এরইমধ্যে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই লক্ষ্যমাত্রায় ডাকঘরের মাধ্যমে প্রথম ৬ মাসেই মাসিক ই-কমার্স ডেলিভারি হবে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার (মাসে আয় হবে প্রায় ৩০ লাখ টাকা), প্রথম বছরে প্রতি মাসে হবে প্রায় ১২ লাখ ডেলিভারি (মাসিক আয় হবে প্রায় ৩ কোটি টাকা), দ্বিতীয় বছরে হবে প্রতি মাসে প্রায় ২৪ লাখ ডেলিভারি (মাসে আয় হবে প্রায় ৬ কোটি টাকা)। আর তৃতীয় বছরে প্রতি মাসে ডাকঘর ডেলিভারি দেবে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ, যা থেকে ডাক বিভাগ মাসে আয় করবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
বর্তমানে দেশের প্রতিটি জেলা শহরের প্রধান ডাকঘরগুলো থেকে পণ্য ইস্যু করা গেলেও বর্তমানে শুধু ঢাকা জিপিও থেকে ই-কমার্স পণ্যগুলো ইস্যু করা হচ্ছে, যা পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে উপজেলা ডাকঘরগুলো পর্যন্ত বাড়ানোর মহাপরিকল্পনা রয়েছে। ই-কমার্স ডেলিভারি সেবার জন্যও ডাক বিভাগের রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। কাভার্ড ভ্যান থেকে শুরু করে ট্রেন এবং লঞ্চের মাধ্যমে ডাক বিভাগ ই-কমার্স পণ্যগুলো সরবরাহ করে থাকে। বর্তমানে প্রায় ৬৪টি জেলা পর্যায়ে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় ই-কমার্স পণ্যের ডেলিভারিগুলো ডাকঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।