কম্পিউটার ভাইরাস হলো এমন একটি কোডের অংশ যা পিসিটি স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে দেয়। ভাইরাস নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে এবং এটা অন্যান্য নেটওয়ার্কের হোস্টগুলোকে দ্রুত প্রভাবিত করতে পারে, এভাবে কম্পিউটারের পুরো নেটওয়ার্ককে অকার্যকর করে দেয়। তাই কত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটা অপসারণ করা যায় তা জেনে নেওয়া আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ একটি ম্যালওয়্যার সংক্রমণ আপনার কম্পিউটারে ডেটার গুরুতর ক্ষতি করতে পারে।
১৯৮৬ সালে বিশ্বে প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস MS-DOS অপারেটিং সিস্টেমগুলির জন্য এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তার নাম দিয়েছিল “ব্রেইন”। এটা প্রধানত একটি বুট সেক্টর ধরণের ভাইরাস, এটা সাধারণত ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে কম্পিউটারে সংক্রমিত করে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের ম্যালিশাস অ্যাপলিকেশন রয়েছে যেগুলো সাধারণত উন্নত কোডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব তৈরি করা হচ্ছে।
পিসি ভাইরাসের বিভিন্ন ধরণ :
সারাবিশ্বে থাকা হাজার হাজার সংক্রামক প্রোগ্রাম আপনার পিসিকে সংক্রমিত করতে পারে তবে তাদের সংক্রমণ লক্ষ্যের ভিত্তিতে একটা তালিকা করা হয়।
বুট সেক্টর ভাইরাস :
বুট সেক্টর ভাইরাস সাধারণত হার্ড ডিস্কগুলির মাস্টার বুট রেকর্ড সংক্রমিত করে। আবার কিছু ভিন্ন ধরণের ভাইরাস আছে যা হার্ড ড্রাইভের বুট সেক্টরকেও সংক্রমিত করে ফেলে। এগুলো বাহ্যিক উৎসের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, যেমন, একটি সংক্রমিত ইউএসবি ড্রাইভ বা ফ্লপি ডিস্ক।
ম্যাক্রো ভাইরাস :
ম্যাক্রো ভাইরাস সাধারণত মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফ্ট আউটলুক এবং এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। ভাইরাসটিকে কোনো নথি বা ইমেইলে এমবেড করা থাকে। আপনি যদি কোনোক্রমে ঐ ফাইলটি ওপেন করেন, তাহলেই এই ভাইরাসটি কম্পিউটারে সক্রিয় হয়ে যায় এবং অন্যান্য সকল ফাইলে এবং ফোল্ডারে ছড়িয়ে যেতে পারে।
ইমেইল ভাইরাস :
এই ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য ইমেলকে মাধ্যম হিসেবে ব্য্যবহার করা হয়ে থাকে এবং কম্পিটার পিসিকে সংক্রমণ করে। এই ধরণের ম্যালওয়্যার সাধারণত ইমেল সংযুক্তিগুলোতে লুকানো থাকে এবং যত তাড়াতাড়ি আপনি সংযুক্তিটি ডাউনলোড বা ওপেন করবেন এটি তখনি ছড়িয়ে পড়ে।
যেভাবে কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ায়:
অন্য কোনো ভাইরাস সংক্রমিত হার্ড ড্রাইভ আপনার পিসিতে যুক্ত করলে কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ধরণের ডিভাইস একটি পেন ড্রাইভ, বহিরাগত হার্ড ডিস্ক বা ফ্লপি ড্রাইভ হতে পারে। এধরনের হার্ড ড্রাইভ ছাড়াও এটা ইমেল সংযুক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যা সহজেই ম্যালওয়্যার বহন করতে পারে। আপনি যদি কোনো অবিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার, সিনেমা, গান ইত্যাদি ডাউনলোড করেন সেক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটারও সংক্রমিত হতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণ :
আপনি চেষ্টা করলে সহজেই কম্পিউটার ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো চিনতে পারবেন। একটি প্রধান লক্ষণ হতে পারে আপনার পিসি অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। আরেকটি লক্ষণ আপনার কম্পিউটারে বিদ্যমান ফায়ারওয়াল সুরক্ষা নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। আপনার পিসিতে রানিং যে অ্যাপ্লিকেশনগুলো আছে তা বার বার ক্র্যাশ করতে পারে। অন্যান্য আরও কিছু এলার্ট আছে যেমন হার্ড ড্রাইভ malfunction এর মেসেজ এবং অন্যান্য অনেক পপ আপ যুক্ত হতে পারে।
কিভাবে ভাইরাস প্রতিরোধ করা যাবে?
ভাইরাসগুলোকে আপনার পিসিকে সংক্রমিত করতে বাধা দেওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু ভাল ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। যেমন-
বহিরাগত ডিভাইস, ইউএসবি ডিভাইসগুলো ভাল কোনো ভাইরাস স্ক্যানার ব্যবহার করে স্ক্যান করা ছাড়া পিসিতে ব্যবহার করা যাবে না।
অনিরাপদ কোনো ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রেরকের আইডি যাচাই না করে কোনো ইমেল সংযুক্তিগুলো ওপেন না করা।
বিনামূল্যে পাওয়া যায় এমন সফটওয়্যারের পরিবর্তে একটি প্রিমিয়াম অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ব্যবহার করুন, কারণ বিনামূল্যে পাওয়া সফটওয়্যারটি ১০০% সুরক্ষা দিতে সক্ষম নাও হতে পারে।
কিভাবে ভাইরাস অপসারণ করবেন?
আপনার পিসিতে সংক্রমণের সম্ভাবনাটি অপসারণ করতে, আপনাকে প্রথমে ভাইরাস স্ক্যান প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করতে সমস্ত (temp) অস্থায়ী ফাইল মুছে ফেলতে হবে। অস্থায়ী ফাইল মুছে ফেলার পরে, ভাল একটি অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে আপনার কম্পিউটার স্ক্যান করে নিন।
আপনি “রিভ” নামক অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে পারেন, যেতা টার্বো স্ক্যান প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্পিউটার ভাইরাস স্ক্যান করে। এটা খুব দ্রুত ভাইরাস সনাক্ত করা এবং অপসারণ করে যার কারণে ভাল ফলাফল পাওয়া যায় । আপনার পিসিত থেকে ইনফেক্টেড কোড বা সংক্রমিত ফাইলগুলো সরানোর পরে, অ্যান্টিভাইরাসটি সবসময় আপডেট রাখুন, যাতে করে যে কোনো ধরণের নতুন হুমকি সনাক্ত করা যায়।