ধরা যাক বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ নেবেন। বেশ ভাল পরিচিত একটি কোম্পানির সেবা নিতে চাইলেন। তারা জানালো যে আপনার বাসার লোকেশনে সেটআপ চার্জ পড়বে দুই হাজার টাকা। কিন্তু কোথাও আবার ১ হাজার তিনশত টাকা। এমনকি ৬০০ টাকাতেও সংযোগ পাওয়া যাবে। কোন কোন এলাকায় আবার নেওয়া হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকাও । এমনটা হওয়ার কারণ হচ্ছে ইনস্টলেশন চার্জ এখনও নির্ধারিত করা হয়নি। ফলে যে আইএসপি যেভাবে ইচ্ছা এ চার্জ আদায় করে নিচ্ছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে সংগঠন আইএসপিএবি কর্তৃপক্ষ এ চার্জ নির্ধারণ করে দেয়নি এখনো। আইএসপিএবি এর দাবি, সেটআপ চার্জ গড়ে শূন্য থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে। যদিও এর চেয়েও অতিরিক্ত চার্জ নেওয়ার খোঁজ পাওয়া গেছে অনেক সময়।
রাজধানীর মিরপুরের কোনো এলাকায় দেড় হাজার, আবার কোথাও ২ হাজার টাকা চার্জ নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এছাড়াও শেওড়াপাড়ায় (রোকেয়া সরণির) নেওয়া হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকারও বেশি । এই হার আবার সংশ্লিষ্ট আইএসপির নির্ধারিত।
এ বিষয়ে আইএসপিএবি এর সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সেটআপ চার্জ বেঁধে দেওয়া হয়নি। আইএসপিরা গ্রাহককে সেবা দিতে গিয়ে অনেক সময় যেভাবে পারে নেয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নতুন গ্রাহক পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় একেক কোম্পানি একেক ধরএর চার্জ নিয়ে থাকে। তবে চার্জের এই হার গড়ে শূন্য থেকে ১ হাজার টাকা।’
এ চার্জ বেঁধে দেওয়ার মত কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা কখনই সম্ভব নয়। যেমন ধরা যাক আপনার বাসায় লাইন আসবে প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে। সেখানে তাহলে ক্যাবলই লাগবে ১৫ হাজার টাকার মত। এই তারের সম্পূর্ণ টাকা গ্রাহককেই দিতে হবে। আবার অনেকের বাসার ঠিক সামনেই সুইচের পয়েন্ট থাকে (স্প্লিটার)। সেখান থেকে সংযোগ নিলে কিন্তু খরচ কম পড়ে। কখনো দেখা যায় খরচ লাগেই না।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘প্রতিটি গ্রাহকের বাসার নিচে যদি ক্যাবলের সংযোগ দেওয়া থাকে (এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান গুলোর সেবা) তাহলে প্রায় সব বাসা বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট হারে চার্জ নেওয়া সম্ভব হবে। সব বাড়ির নিচে এনটিটিএন গুলো লাইন সংযোগ পৌঁছালে ক্যাবলের ভাড়া দিতে হয়। মাস শেষে ওটারও চার্জ পড়ে আলাদা করে।’
জানা যায়, রাজধানীর DOHS এলাকা গুলোতে এ সুযোগ অনেক বেশি। সেখানে বাসা বাড়িরগুলো নিচে এনটিটিএন লাইন সংযোগ পৌঁছেছে। কোথাও কোথাও আবার সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই ধরনের ক্যাবল সংযোগও দেওয়া হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, মহাখালী DOHS এলাকায় এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলো ফাইবার অ্যাট হোম প্রায় প্রতিটি বাড়ির নিচে সংযোগ দিয়েছে। এখানে কোনো ধরনের ইনস্টলেশন চার্জ লাগে না বলা চলে । তবে প্রতিটি লাইন সংযোগের জন্য এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৫৭৫ টাকা ভাড়া দেয় আইএসপি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো । এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয় আইএসপির চার্জ, অন্যান্য বিবিধ খরচ ও মুনাফার অংশ যুক্ত করে বিল করে দেওয়া হয় গ্রাহকের নামে।
বনানী, বারিধারা, মিরপুর, ডিওএইচএসেও এ ধরনের সংযোগও আছে। এসব জায়গায়গুলোতে অবশ্য কোনও এনটিটিএন সরাসরি বাড়িতে সংযোগ দিয়ে থাকে না। তারা এলাকাগুলোতে PoP (পয়েন্ট অব প্রেজেন্স) পর্যন্ত সংযোগ দেয়। সেখানকার OLT (অপটিক্যাল লাইন ট্রান্সমিশন) থেকে Overhead ক্যাবলের মাধ্যমে স্প্লিটারে সংযোগ গিয়ে থাকে। স্প্লিটার থেকে বিভিন্ন বাসায়গুলোতে আইএসপির সংযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। এ কারণে সেটআপ চার্জ একেক রকম হয়।
মিরপুর DOHS-এ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (BTCL) ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সংযোগ সমূহ পৌঁছে দিচ্ছে। এটি BTCL-এর পাইলট প্রজেক্ট বলে জানা গেছে।